মোহময়ী মাথেরান

   Suraj Bag Bishal



                      পশ্চিমবঙ্গে বাড়ি ? চাকরীসূত্রে বা বিশেষ প্রয়োজনে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা ? দার্জিলিং, সিকিম মায় সিলারিগাঁও বা ইচ্ছেগাঁও- হাতছানিতে সাড়া দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই ? তাতে এত ভাবনার কোন কারণই নেই, ঘুরে আসুন "মাথেরান"
                     নামটা বড্ড অচেনা ঠেকছে, হতেই পারে, চিনে নিতে কতক্ষন। বেশি ভণিতা না করে আসুন একটু চিনে নেওয়া যাক মাথেরানকে।মাথেরানকে বলা হয় ভারতের সবথেকে ছোট হিল স্টেশন এবং এটি এশিয়ার একমাত্র অটোমোবাইল বর্জিত হিল স্টেশনও বটে। পশ্চিমঘাট পর্বতের অংশ আর উচ্চতা ওই ধরুন ৮০০ মিটার মানে ২৫০০ ফুটের কাছাকাছি। আর বেশী ভূগোল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করে বেরিয়ে পড়া যাক মাথেরানের উদ্দেশ্যে। 

                                                             আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ

                                      ১৪ই জুলাই সকাল সকাল কল্যান স্টেশন থেকে নেরালগামী ট্রেনে উঠে পড়লাম মুম্বাইয়ের বিখ্যাত লোকাল ট্রেনের ভিড়কে উপেক্ষা করে। নেরালে নেমে শেয়ার ক্যাবে পৌঁছে যাওয়া যায় মাথেরান, কিন্তু আমার জীবনের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে সেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম এখানেই, পুরো রাস্তাটা ক্যাবে না গিয়ে মাঝরাস্তায় নেমে টয়ট্রেনের লাইন ধরে হেঁটে যাব এরকমই ঠিক হোলো। হ্যাঁ, বলাই হয়নি নেরাল থেকে মাথেরান পর্যন্ত ন্যারোগেজ ট্রেন চলে দার্জিলিং-এর টয়ট্রেনের মত, চাইলে তাতেও পৌঁছে যাওয়া যায়, কিন্তু সময় সাপেক্ষ এবং ট্রেনের সংখ্যাও নেহাত কম। পরিকল্পনামত মাঝরাস্তায় নেমে শুরু হল ন্যারোগেজ লাইন ধরে পথ চলা। যত এগোতে থাকলাম তত মুগ্ধতা বাড়তে থাকল। খাদের ধার দিয়ে হেঁটে যাওয়া, সংকীর্ণ পথের বাঁক, ট্রেন এসে যাওয়ার ভয় এত আশঙ্কাকে দশ গোল দিয়ে দিল সবুজের টিম, আর জিতিয়ে দিল আমাদের। ঘণ্টা তিনেক হাঁটার পর যখন মাথেরান পৌঁছলাম তখন ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁইছুঁই। যেহেতু অটোমোবাইল বর্জিত হিল স্টেশন তাই ঘুরে বেড়ানোর দুটো অপশন, এক, ঘোড়ায় চড়ে, দুই, ১১নং গাড়ি মানে ওই পদব্রজে আর কি। আমরাও পায়ে হেঁটে ঘুরব ঠিক করলাম কিন্তু এখন অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে খাওয়া দাওয়া তা নাহলে পেটের ভেতর ছুঁচোরা বৃহত্তর গণআন্দোলন কর্মসূচীর ডাক দেবে। অল্পবিস্তর খোঁজাখুঁজির পর উডল্যান্ড রিসর্টকে মাথা গোঁজার ঠাই হিসাবে ঠিক করলাম। এরপর সুইমিং পুলে অল্পবিস্তর গা ভিজিয়ে গরম গরম লুচি, চানা মশলা, ভাত আর শেষ পাতে সিমুইয়ের পায়েশ খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। গোটা মাথেরান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মোট ৩৮টা ভিউ পয়েন্ট। যার মধ্যে খান দশেক বেশ নামজাদা। এখনও অবধি আমাদের সঙ্গী বৃষ্টি কিন্তু আমাদের সাথ ছাড়েনি। তাই বৃষ্টিকে সাথে নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম, চারোলেট লেকের উদ্দেশ্যে, ভরা বর্ষায় এই লেকের যেন ভরা যৌবন। লেকের সামনের ড্যামে নেমে জলকেলি করা থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা বিরত থাকিনি। 

                                                            চারোলেট
              একে একে ইকো পয়েন্ট, প্যানোরমা পয়েন্ট, লুইস পয়েন্ট, মাংকি পয়েন্ট ঘুরে আর বহু জায়গা না ঘুরে রিসর্টে ফিরতে হল বৃষ্টির বদান্যতায়। ফেরার পথে অন্ধকার জঙ্গলে পথ হারিয়ে শিরদাঁড়া বরাবর শীতল শিহরণের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার আরেক নাম যে অ্যাডভেঞ্চার সেটাও বুঝেছিলাম সেইদিন। ভালোয় ভালোয় যে রিসর্টে ফিরে এসেছিলাম তার জন্য সেই নাম না জানা দেবদূতকে অজস্র ধন্যবাদ। ফিরে এসে রাতের মেনুতে যখন পাতে পড়ল পাওভাজি আর পোলাও এর মত জুটি তখন কে ফার্স্ট বলটা ফেস করবে সেই দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে কখন যে পাত পরিষ্কার হয়ে গেছে টেরও পাইনি। এরপর নিকষ বুনো আবহাওয়ায় বৃষ্টিস্নাত রাতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম বেশ নির্ঝঞ্ঝাটে। পরদিন সকালে যখন নেমে আসছি মাথেরান ছেড়ে তখন মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন আর কয়েকটা দিন থেকে যাওয়া যায়না ? কিন্তু ওই পেশাগত ব্যস্ততা, টার্গেট, ডেডলাইন শব্দগুলো যে বড় নিষ্ঠুর সেটা আপনাদের থেকে আর ভালো কে জানে....
         
                              এই বাঁকের শেষেই হয়ত অনন্ত শূন্যের অপেক্ষা



                                                   গহন পথে...




                                                          হেরিটেজ তকমাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা

              শেষে একটাই কথা, মাথেরানে এসে দার্জিলিং-সিকিমকে খুঁজবেন না, মাথেরান সুন্দরী তার স্তব্ধতা, স্নিগ্ধতা আর অপার্থিব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, ভালো থেকো "মাথেরান"।।
--------------------------------------------------
কল্যান থেকে নেরাল ট্রেনভাড়া - ১৫/-
নেরাল থেকে মাথেরান শেয়ার ক্যাব - ৮০/-
উডল্যান্ড রিসর্ট - ১১০০/- (মাথাপিছু থাকা এবং খাওয়াwww.woodlandsmatheran.com
দূরভাষ : 02148230271
মাথেরান যাওয়ার উপযুক্ত সময় - জুন থেকে আগষ্ট।
-------------------------------------------------
                     স্পেশাল নোট : গাড়িতে করে মাথেরান না গিয়ে মাঝরাস্তায় নেমে পড়ুন 134NM ফলকের কাছে, হেঁটে যান ট্রেনলাইন বরাবর, ফিরে এসে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই পোষ্টটা খুঁজবেন গ্যারান্টি দিচ্ছি।    
                                     134 NM থেকে শুরু করুন, এরপর 134...135...136..137...138 এগোতে থাকুন

                                                              আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ

                                                               এই শেষ, এবার পদব্রজে


                                                        WOODLAND RESORT
Writer & Photography :- Suraj Bag Bishal


                                                                                            বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমাদের
 Facebook Group "Cholun Berie Asi ( Let's Go & Enjoy Nature )"  join করুন 

No comments

Powered by Blogger.