"উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে" : 2nd Part




               আজকের গন্তব্য আমাদের সবার বহু আক্ষাংকিত প্রতিক্ষিত গুরুদংমার লেক (১৭৮০০ ফুট) ভোর  টা থেকেই সাজ সাজ রব টার আগেই বেরুতে হবে. গুরুদংমার লেক লাচেন থেকে প্রায় ৬৬ কিমি রাস্তাওখান থেকে ফিরে আবার আমরা লাচুং যাব. এমনিতেই যাতায়াত নিয়েই অনেকটা রাস্তা. তাছাড়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল বেলা বাড়ার সাথে সাথে লেকের কাছে আবহাওয়া খারাপ হতে থাকেতখন উচ্চতা জনিত সমস্যার​ সম্মুখীন হতে পারে। এসব  হাত থেকে রক্ষা পেতে ভোর ভোর যাত্রা শুরু।
               ৪ টার সময় হোটেলের বাইরে আসতেই হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস আমাদের ঘিরে ধরলো। ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলাম সবাই। আগের রাত থেকেই লোডশেডিংয়ের কারণে চারিদিক অন্ধকার।তার মাঝেই মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে আমরা প্রস্তুত বাকি সবার মতো আমাদের গাড়ি  ছাড়লো একসময়। নিকষ কালো অন্ধকারে বাইরের কোনো দৃশ্য দেখা যায় নাশুধুমাত্র গাড়ির হেডলাইটের আলোয় কালো পীচঢালা রাস্তা ছাড়া। কিছুক্ষণ পর এলো ওই মাহেন্দ্রক্ষণ। কালো কালো পাহাড়ের পেছনে ওই দূরের হিমশৃঙ্গের চূড়ায় সূর্যের প্রথম রশ্মি। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে হিমশৃঙ্গ গুলি সোনালী রং ধারণ করেছেকেউ যেন টন টন সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছে।  দৃশ্য ভোলার নয়নয় ্যামেরাতে ধরে রাখা সম্ভব। বাকরুদ্ধ আমরা ওই দৃশ্য দেখতে দেখতে চললাম। সময়ের সাথে সাথে আলো  বাড়তে লাগলোআর আমাদের চোখের সামনে খুলতে লাগলো এক এক করে প্রকৃতির অনাবিষ্কৃত দুয়ার




থাঙ্গু উপত্যকা : সবুজ ঘাসের কার্পেট 
                 লাচেন‌ থেকে প্রায়  ঘন্টা ড্রাইভ করার পর আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়ালো থাঙ্গু (১৩৫০০ ফুটনামক জায়গায়। পাশেই সুবিশাল উপত্যকা। আর উপত্যকার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছোট্ট দোকানে আমাদের জলখাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমি ওই সময়টুকুও নষ্ট করতে চাইলাম না। ক্যামেরা নিয়ে হাঁটা লাগালাম উপত্যকার দিকে
                 খুব সুন্দর উপত্যকা। সবুজ ঘাসে ভরে আছেউপর থেকে মনে হচ্ছিল পুরো উপত্যকাতে বুঝি সবুজ কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে চামরী গাই (Yak) এক বড় দল। আমি এই প্রথম চামরী গাই দেখলাম। সাথে সাথে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক। মনের সঙ্গে ক্যামেরাতেও বন্দি করে রাখলাম। প্রায় ১৫/২০ মিনিট ধরে উপত্যকার দৃশ্য উপভোগ করে ফিরে এলাম ওই দোকানে। খাবার রেডিফটাফট ব্রেড বাটার জাম মুখে পুরে নিলাম। সাথে অমৃত সমান গরম চা





                 স্থানীয় দোকানীর কাছে শুনলাম মে এবং জুন মাসে থাঙ্গু নাকি আল্পাইন ফুলে (Alpine Flower) ভরে যায়অপরদিকে অক্টোবর থেকে মার্চ ওব্দি আবার বরফে ঢাকা পড়ে থাকে। আমি চলেছি এপ্রিলে। তাই না আল্পাইন না বরফ। কিন্তু যা পেলাম তা কম কিসের ?? সবুজ উপত্যকাতাতে চামরী গাইর দলচারিদিকে নাম না জানা ছোট্ট ছোট্ট গোলাপী ফুলআর সব কিছুর পেছনে ওই শ্বেতশুভ্র হিমালয় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূর দিয়ে প্রবাহিত "ছা-লামু", পরে যেটি তিস্তা নাম নিয়ে বয়ে গেছে সমতলের অভিমুখে। না পাওয়ার চেয়ে পাওয়ার পাল্লাটা অনেক ভারী। খুশি মনে এগিয়ে চললাম আরো উঁচুর দিকে ।।



রুক্ষতার সৌন্দর্য :- উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে 
                   থাঙ্গু ভ্যালি দেখে আমরা এগিয়ে চললাম গুরুদংমারের (৩২ কিমিদিকে। আর এখান থেকে মাত্র  কিমি দূরে চোপতা ভ্যালি। ফেরার পথে চোপতা দর্শন করব। এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা। এর মাঝেই আমরা প্রকৃতির রুপের পরিবর্তন লক্ষ্য করলামএতোক্ষণ ওব্দি আমাদের চোখকে শান্তি দিয়েছিল সবুজে ভরা পাহাডফুলে ভরা গাছপালা,নাম না জানা ঝোপঝাড়। থাঙ্গু পেরোতেই ধীরে ধীরে সবুজের পরিমাণ কমতে লাগল। এক সময় তো সবুজের চিহ্নই দেখ গেলো না। শুরু হল শুষ্ক ন্যাড়া পাহাড়রুক্ষ পাহাড়। রুক্ষতার যে এতো সৌন্দর্য আছে এখানে না এলে জানতামই না। সবুজের সৌন্দর্য তাও বর্ণনা করা যায়কিন্তু রুক্ষতার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এই সব রুক্ষ পাহাড়ের কতো না রুপনিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। চোখ ফেরানোই মুস্কিলযদি কিছু ছেড়ে যাই



.গন্তব্য গুরুদংমার :- উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে
                      ধূসর রুক্ষ প্রকৃতির বুক চিরে চলে গেছে কালো পীচ রাস্তা। ১৬০০০/১৭০০০ ফুট ওপরে  রাস্তা খুব সুন্দর এবং মসৃণ। যার সবটুকু শ্রেয় যায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর। উনাদের অকৃত্রিম প্রচেষ্টায় সুচারু ব্যবস্থাপনায় এই কঠিন পরিস্থিতিতে  আমরা খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছি। থাঙ্গুর পর থেকেই সেনা ছাউনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছেমাত্র  কিমি দূরে চীন সীমান্ত। তাই সেনাবাহিনীর কর্মব্যস্ততা  নজরে পড়ে। সঙ্গত কারণে ছবি নেওয়া নিষিদ্ধ। নভেম্বর ডিসেম্বরের ঠাণ্ডায় যখন আমরা কাঁপতে থাকিতখন এখানে -১১/১২ ° তাপমাত্রা। চারিদিকে বরফ আর বরফ। তাও দেশের সুরক্ষা প্রসঙ্গে কোনো কার্পণ্য নেই
উচ্চতার সাথে সাথে ঠাণ্ডা বাড়তে লাগলো। রাস্তার পাশে জমে থাকা জল জমে বরফে পরিনত হয়েছে। তাই দেখে আমাদের কি আনন্দ। তখন  কি জানতাম গুরুদংমার লেক আমাদের জন্য বরফের ডালি সাজিয়ে রেখেছে




🙏🙏 গুরূদোংমার হ্রদ :- You Are Closed To God 🙏🙏
                     অবশেষে এলো ওই মাহেন্দ্রক্ষণযার জন্য বিগত  মাস ধরে কতো প্লান বানিয়েছিসাজিয়েছিভেঙ্গেছিআবার গড়েছি। ধূসরবাদামী রূক্ষ তিব্বতীয় মালভূমির বুক চিরে পৌঁছে গেছি আমাদের স্বপ্নের গন্তব্য স্বর্গলোক সম "গুরূদোংমার হ্রদএ। উত্তঙ্গ পর্বত শিখরে ঘেরা গুরূদোংমার লেক অর্থাৎ You Are Closed To God. নীল আকাশের নীচে সবুজ নীল জলের ত্রিকোণা হ্রদ। পেছনে অতন্দ্র প্রহরী বরফাবৃত পাহাড়



                      ১৭৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সরোবরটি বৌদ্ধ  হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র। কথিত আছে, "গুরু পদ্মসম্ভবতিব্বত থেকে ফেরার পথে এই সরোবরের জল পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করেছিলেন। সেই থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান। এছাড়াও কথিত আছে যে পাহাড় বাসীদের তৃষ্ণা মেটাতে "গুরু পদ্মসম্ভবসরোবরের যে অংশ হাত রেখেছিলেন ওই অংশের জল খুব ঠান্ডায়ও বরফে পরিনত হয় না। তাই আপনি যে কোনো সময়েই যান না কেন জলের দর্শন পাবেন ই। এটাই গুরূদোংমারের ঐশ্বরিক অথবা অলৌকিক ক্ষমতা ।।
                     আমরা  এই ক্ষমতার সাক্ষী হলাম। এপ্রিল মাসের ঠাণ্ডায় প্রায় পুরো সরোবরের জল জমে বরফে পরিনত হলেও কিছুটা অংশে বরফ দানা বাঁধতে পারে নি। ওই জায়গায় লক্ষ করলাম তীব্র নীলফিরোজা নীলহালকা নীল জলের হোলি খেলা। আর ঠিক ওখান থেকেই সৃষ্টি হয়ে তীর তীর করে বয়ে যাচ্ছে "ইয়ুম-চুনদীপরে এটি তিস্তার সাথে মিশেছে পেছনের ক্যানভাস জুড়ে রয়েছে আদিম অথচ চিরনতুন শ্বেতশুভ্র "কাংচেনজাইগিরিশৃঙ্গ। অতি বড় নাস্তিক  এখানে মাথানত করবে।




                    এত উচ্চতায় ঠাণ্ডা হাওয়ার প্রাবল্য  ভূলিয়ে দিচ্ছে বরফাবৃত হ্রদ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অতুলনীয় সৌন্দর্য। হ্রদের চারপাশের রাস্তা ধরে পরিক্রমা করেও আসা যায়। দুই এক জন করছে দেখলাম। ওরা পূণ্যার্থী না ভ্রমনার্থী ?? জানা নেই আমার। ২৯০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত বিশাল সরোবরটি প্রদক্ষিন করতে . কিমি হাঁটা লাগাতে হবে। আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল পরিক্রমা করারকিন্তু সাথে মাবাবা সমেত আরো বয়স্করা থাকায় এই চিন্তায় আপাতত ধামাচাপা দিলাম। পাশের মন্দিরে ঢুঁ মেরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলাম জলের কাছে। ধীরে সুস্থে সরোবরের শোভা উপভোগ করলাম। দেখলাম "ইয়ুম-চু"নদীর উৎস স্থল। ফেরার সময় তীব্র কনকনে ঠান্ডা জলে হাত ডুবিয়ে মুঠো ভরে জল তুলে নিলাম। ছিটিয়ে দিলাম নিজের মাথার উপর...................



চোপতা উপত্যকা :- উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে 
                       এতক্ষণ ধরে গুরুদোংমার সরোবর দেখেও যেন শান্তি হয়নাফিরে যেতে কিছু তেই মন চাইছে না। তবুও ফিরতেই হবেতাই ফেরার পথে পা বাড়ালাম। কিন্তু মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিল অপার বিস্ময় ভরা পাহাড় পর্বত ঘেরা বরফাবৃত পবিত্র সরোবরটি। ফেরার রাস্তা এক 
                      ফেরার পথে মনোজ ভাই গাড়ি দাঁড় করালেন এক মিলিটারি ব্যারাকের পাশে। এখানে নাকি মিলিটারিদের একটি কাফে রয়েছে। এই কাফে তে বিনামূল্যে ভ্রমনার্থী দে চা কফি পান করার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা  ভেতরে ঢুকলাম। Self Service ব্যবস্থা রয়েছে। নিজেরাই নিজেদের মত করে কফি নিয়ে নিলাম। আর "টাহিসেবে ওখান থেকে ৩০ টাকার আলু পকোড়া কিনলাম। খিদে পেটে এসব যেন অমৃত সম। ওখান থেকে বেরিয়ে যাবো তার আগেই এক সেনা জোয়ান আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন অনেকগুলি Real কোম্পানির ১লিফলের জ্যুসের প্যাকেট। এতো গুলো প্যাকেট তাও বিনামূল্যে। অভূতপূর্ব সেবা। বেরিয়ে এলাম অকৃত্রিম খুশির সাথে। তখনই নজরে পড়ল পাশের এক সাইনবোর্ড। ওখানে লেখা আছে ১৫০০০ ফুট উপরে এটি বিশ্বের উচ্চতম মিলিটারি কাফে।
                        পরের গন্তব্য চোপতা উপত্যকা। থাঙ্গুর  কিমি আগেই এর অবস্থান। এই প্রথম মনোজ ভাই আমাদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ চাইল। বেশি নয় সামান্য কিছুএটি নাকি প্যাকেজর বাইরে। অনেক শুনেছি চোপতা নিয়ে। তাই না করলাম না৫০০ টাকা গাড়ি পিছু দিয়ে চললাম চোপতার উদ্দেশ্যে। প্রধান রাস্তা থেকে  কিমি ভেতরে হবে হয়তো। কিন্তু যে আশা নিয়ে আমরা এসেছিলামপৌঁছে আশাহত হলাম। মন খুশি করার মত কিছুই পেলাম না। উপত্যকা যেমন হয়   তার ব্যাতিক্রম নয়। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে "চোপতা-চু" আর গোটা এলাকা জুড়ে হালকা ধসূর সবুজের ছাপ। তাতে চামরী গাইর দল বিচরন করছে। চোখ টানলো উপত্যকার মাঝে দুটি ছোট্টো কুঁড়ে ঘর। নিচে নামা বারন। বুঝলাম না সবার এতো প্রিয় চোপতা আমার কেন ভালো লাগলো না ?? হয়তো গুরূদোংমারের নেশা টা তখনো কাটেনি বা হয়তো নিচে নেমে দৌড়াদৌড়ি করতে পারলাম না তাই ভালো লাগলো না।




লাচেন থেকে লাচুং :- উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে
                   গতকাল লাচেন পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলআর আজ  ভোর হবার আগেই গুরুদোংমারের সরোবরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেই অর্থে আজ দিনের বেলায় দ্বিপ্রহরের সময় প্রথম লাচেন দর্শন। একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্ৰাম বললে যা বুঝায়। প্রায় ৭০/৮০ টি বাড়ি নিয়েই লাচেন। বেশিরভাগই হোটেল মনে হলো লাচেনে নাকি সুন্দর একটি মনাষ্ট্রিও আছে। কিন্তু আমাদের কাছে বেশি সময় নেই লাচেন ঘুরে দেখার মত। দুপুরের খাবার খেয়েই "লাচুংযেতে হবে। তাই কিছু না দেখেই লাচেন ছাড়তে হলো আমাদের।




                  লাচেন ছাড়তেই সর্বপ্রথম নজরে পড়ল "লাচেন-ঝোরা" দুই ধাপে ছোট্ট জলপ্রপাতটি সশব্দে রাস্তার উপর আছড়ে পড়ছেতারপর আপন মনে রাস্তা পার করে "লাচেন-চুতে গিয়ে মিশে গেছে। কালকের সর্বক্ষণের সঙ্গী সুন্দরী "লাচেন-চুআজ  আমাদের সাথ ছাড়লোনা যতক্ষণ ওব্দি আমরা "চুমথাংপৌঁছাচ্ছি।




                              "চুমথাংপৌঁছানোর পর আমাদের গাড়ি ডান দিকের রাস্তা নিল। এখান থেকে মাত্র ২১ কিমি দূরে "লাচুং" এবার লাচুং ওব্দি আমাদের সঙ্গ দিল খরস্রোতা "লাচুং-চুনদী। এই পথের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হল "ভীমনালা জলপ্রপাত" কিন্তু বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে "Amitabh Bachchan Waterfalls" স্থানীয়দের দ্বারা নামাঙ্কিত। নামকরণের কারণ জানতে গিয়ে জানলাম "বর্ষাকালে জলপ্রপাতটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এমনকি প্রপাতটির তাণ্ডবে রাস্তার গাড়ি চলাচল  বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর ওইসময় জলপ্রপাতটির কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে অতিব আকার ধারণ করে। যা নাকি একমাত্র Amitabh Bachchan  সাথে তুলনীয়।মনে মনে খুব খুশী হলাম নামকরণের সার্থকতা দেখে। সত্যি বিশাল আকৃতির এই জলপ্রপাতটি এখনই বিশাল জলরাশি নিয়ে পৃথিবীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আর তাতেই অর্ধেক রাস্তার হাল খারাপ। বর্ষাকালে তাহলে কেমন রুপ ধারণ করে ?? ভয়ঙ্কর সুন্দর জলপ্রপাতটি পেছনে রেখে এগিয়ে চললাম। কিছুক্ষণ পরেই এক সুদৃশ্য তরোনদ্ধার দেখে বুঝলাম আমরা লাচুং  প্রবেশ করছি।





                     ১৮ই এপ্রিলের পড়ন্ত বিকেলে আমরা লাচুং  (৮৬১০ ফুটপ্রবেশ করলাম উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরালাচুংপা সম্প্রদায়ের গ্ৰাম এই লাচুংয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে সুন্দরী ঝর্নাতুষারাচ্ছাদিত পাহাড়চূড়াখরস্রোতা নদী "লাচুং-চু" প্রধানত মিলিটারি ছাউনী এবং ইয়ুমথাং যাত্রীদের রাত্রিবাস হিসেবে লাচুং  নামডাক কিন্তু এসব ছাড়াও লাচুংয়ের নিজস্ব এক বৈচিত্র্যবৈশিষ্ট্য  সতন্ত্রা রয়েছে লাচুং  প্রবেশ করতেই আমাদের স্বগত জানালো এখানের বিখ্যাত জলপ্রপাত "ছুমাজং" ধরিত্রী কাঁপিয়ে পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে এই তম্বী ঝরনা এছাড়াও নজরে এসেছিল রাস্তার ধারে গাছ ভর্তি অজস্র রডোডেন্ড্রনের ফুল লালগোলাপীসাদা কতো রংয়ের ফুল ফুটে আছেযেন কেউ থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে।।




                     এখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল Apple Mountain Retreat এ। প্রধান রাস্তার পাশেই কয়েকটি রুম নিয়ে অবস্থিত দোতলা এই হোটেলটি। আমাদের জন্য বরাদ্দ করা দোতলার একটা রুমে ব্যাগ রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। বাইরের দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ অবস্থা। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে ডানদিকে জলপ্রপাত"ছুমাজং" যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। আর বামদিকে হোটেলের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সবার প্রিয় "লাচুং-চু" উফ্ কি দৃশ্য। হোটেলটি গুনগত মানে 1 star না হলেও অবস্থান গত করনে চোখ বুঝে 5 star দেয়াই যায়। না এমন যায়গায় হোটেলে বসে সময় নষ্ট করার মানে হয়না। ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেল বাউন্ডারি পেরলেই "লাচুং ব্রীজ" আর তার নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা "লাচুং-চু"।।

                      
 ব্রীজ পেরিয়ে নেমে পড়লাম "লাচুং-চুতীরে। যতোটা না চওড়াতার থেকে অনেক বেশি স্রোত। আমাদের মতো অনেকেই নদী তীরে দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছে। নদীর তীর ধরে ধরে অনেকটা হাঁটলাম। এই পথে দেখলাম ছোট বড় কতো অজস্র ঝর্না। এই ঝোরা গুলির তাণ্ডবে কোথাও কোথাও রাস্তা বলে কিছু নেইসব বিলীন। পাথরে পাথরে লাফ মেরে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম মিলিটারি ছাউনী কাছে। ফেরার পথে দেখলাম এক অবিস্মরণীয় সূর্যাস্ত। পশ্চিম আকাশ আবীরে রাঙ্গীয়ে সূয্যিমামা ডুব দিল পশ্চিম দিগন্তে।




No comments

Powered by Blogger.