"উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে" : 3rd Part


            সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছি ইয়ুমথাং ভ্যালি হয়ে জিরো পয়েন্ট যাওয়ার জন্য আজ বরফ নিয়ে খেলবোমনটা এমনিতেই বেশ উৎসুক তাছাড়া  ঘুম থেকে উঠেই পৌঁছে গিয়েছিলাম নদীর কাছে বেশ মজাই হয়েছে আমি আসার পর পরই মাকাকিমাভাইবোন সবাই এক এক করে হাজির ওখান থেকে ফিরে চা খেয়ে চলছি আজকের গন্তব্য জিরো পয়েন্ট  দিকে লাচুং থেকে ইয়ুমথাং ভ্যালি ২৬ কিমিআর জিরো পয়েন্ট ওখান থেকে আরো ২৫ কিমি







                   ইয়ুমথাং যাওয়ার পথে প্রথমেই পড়ল "সিংম্বা রডোডেন্ড্রন স্যাংচুয়ারী" রেডপান্ডার আঁতুড়ঘর। এছাড়াও এখানে কিছু বিরল প্রজাতির পশু  পাখি পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো "Wood Snipe, Hoary-Throated Batwing" ইত্যাদি। স্যাংচুয়ারীর সুদৃশ্য তরোনদ্ধার পেরোতেই বাড়লো রাস্তার দুই দিকে রডোডেন্ড্রনের গাছের সারিতার পেছনে ক্যানভাসে সবুজ পাহাড়। দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। এখানে নাকি ৪০ প্রজাতির রডোডেন্ড্রন পাওয়া যায়। আমি এত ফুল চিনি না। তবে অনেক রকমের অনেক রংয়ের ফুল দেখলাম। যেন ফুল গুলি নিজেদের মাঝে হোলি খেলেছে। কতো যে ফুল দেখলাম তার হিসেব নেই। মনে হচ্ছিল কোনো এক স্বপ্নপুরীতে বিরাজ করছি। বুঝলাম ইয়ুমথাংভ্যালি কেন আজকের দিনে় Valley Of Flowers নামে .




               ২০১২র জুন মাসের এক ভয়ঙ্কর Landslide  "সিংম্বা রডোডেন্ড্রন স্যাংচুয়ারী" অনেকটা অংশ ধূলিসাৎ হয়ে যায় এই দূর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় Forest Rest House টি এখনো ওই দূর্ঘটনার সাক্ষী হিসেবে বিরাজ করছে রাস্তার দুই পাশে বড় বড় পাথরের স্তূপভেঙ্গে পড়া গাছ গুলোর দণ্ডায়মান গুঁড়ি
              এই পাহাড় ধ্বসের ফলে ছোটোখাটো ঝর্না গুলির জল আটকে পড়ে সৃষ্টি করেছে ছোট্ট এক জলাশয়ের। স্বচ্ছ নীল জলের এই লেকটি দেখতে বেশ সুন্দর লাগছিলো। ধীরে ধীরে এটি উত্তর সিকিম ভ্রমনার্থী দের কাছে পর্যটন আকর্ষণের দ্রষ্টব্য হিসেবে গুরুত্ব বাড়ছে।




                মিনিট ৩০ পর ফুলের উপত্যকার বুক চিরে আমরা পৌঁছে গেলাম ইয়ুমথাং ১২০০০ ফুট উচ্চতার ইয়ুমথাং  আমাদের জলখাবারের ব্যবস্থা রয়েছে তাই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম সবাই ১০/১২টি ছোট ছোট দোকান নিয়েই ইয়ুমথাং স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের হস্তজাত সামগ্ৰী বিক্রি করছেএছাড়াও রয়েছে শীতবস্ত্রর প্রচুর সম্ভার চারিদিকে প্রপেলার গাছের সারি অনন্ত সবুজের মাঝে ছোট্ট রঙ্গিন বসতি চোখ জুড়িয়ে যায় অবস্থানের নিরিখে
                মনোজ ভাইর কথামতো আমরা একটি দোকানে ঢুকলাম। খাবারের ব্যবস্থা গতকালের মতোই। যাই হোক জলখাবার খেয়ে ওই দোকান থেকেই সবাই এক জোড়া করে "গাম বুটনিলাম। এই বুট পরেই নাকি জিরো পয়েন্ট যেতে হবেবরফে হাঁটাহাঁটি করার জন্য উপযুক্ত। এখানে একটা কথা বলার বিষয় জিরো পয়েন্ট নিয়ে যাওয়ার জন্য Driver কে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। আমরাও মনোজ ভাই কে ২৫০০/- দিলাম (পাশে একটি Sign Board উল্লেখ আছে  দেখলামজিরো পয়েন্টর জন্য। এখন সোজা যাবো জিরো পয়েন্টফেরার সময় ঘুরবো ইয়ুমথাং উপত্যকা।




            যাচ্ছি জিরো পয়েন্টের দিকে,‌বরফ নিয়ে খেলব‌‌ আজ মন‌ যেন মানছিলনাকখন পৌঁছোই কখন পৌঁছোইদেরি যে আর সয়না ইয়ুমথাং থেকে প্রায় ২৬ কিমি় দূরে জিরো পয়েন্ট ( ১৪০০০ ফুট) মিনিট ১৫ যাওয়ার পর আমাদের গাড়ি দাঁড়ালো "শিবমন্দিরবলে এক সেনা ছাউনির সামনে মনোজ ভাই অনুমতি সংগ্ৰহ করতে যেতেই আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম ১২৮০০ ফুট উচ্চতায় "শিবমন্দিরবেশ সুন্দর জায়গা চারিদিকে উঁচ উঁচু পর্বত শিখরআর শিখর গুলি সাদা বরফে দিয়ে ঢাকা।।




               অনুমতি সংগ্ৰহ করেই আমাদের গাড়ি ছুটল জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। যত এগোচ্ছি জিরো পয়েন্টের দিকে ততোই বরফের আধিখ্য বাড়তে লাগলো। বাম ডানআগে পিছে চারিদিকে বরফ  বরফ। পাশের পাহাড় গুলি  যেন সমস্ত রং ছেড়ে সাদা রঙের বস্ত্র পরিধান করেছে। আহ্ কি অপূর্ব দৃশ্য!!
               অবশেষে পৌঁছালাম জিরো পয়েন্ট। আমাদের আগে অনেক গাড়ি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম পর্যটকদের প্রচুর ভিড়। আমরা ওখানেই নেমে পড়লাম। সামনের একটি পাহাড়ের অনেকটা জায়গা জুড়ে বরফ জমেছে। সবাই ওখানে বরফ নিয়ে মজা করছে। ওটাই জিরো পয়েন্ট। আমি আর থাকতে পারলাম না। বরফ দেখেই ছোট বাচ্চার মত দৌড় লাগালাম। ঝাঁপিয়ে পড়লাম বরফের উপর। ডুবে গেলাম বরফের দুনিয়ায়।।






ইয়ুমথাং ভ্যালির অন্দরে :- উত্তর সিকিমের পথে প্রান্তরে
**************************************************
             প্রায় ঘন্টা দুয়েক জিরো পয়েন্টে কাটিয়ে ফিরে চলেছি ইয়ুমথাং ভ্যালি দিকে। বরফ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে কখন যে এত সময় চলে গেছে বুঝতে পারিনি। মনোজ ভাই বলেছিল "এখানে অনেক সময় দিয়ে দিয়েছিতাই ইয়ুমথাং পুরো ঘোরা যাবে না। না হলে গ্যাংটক পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে।পুরো দেখা হবে না জেনে  মন খারাপ করলো না। কারন এখানে তো সূদে আসলে মিটিয়ে নিয়েছি
                ইয়ুমথাং পৌঁছতেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। অসাধারণ দৃশ্য চারিদিকে। উপত্যকাটি সবুজ ছোট ছোট ঘাসে ভরে রয়েছেআর তাতে নাম না জানা ছোট ছোট গোলাপী ফুল। তার পরেই রয়েছে খরস্রোতা লাচুং নদী। আপন মনে আপন বেগে বয়ে চলেছে অনন্তকাল ধরে। জলের রংয়ে  নীল আকাশের ছোঁয়া।অপর পাড়ে নদীর গা ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়। তাতে লেগেছে প্রপেলার গাছের সবুজ ঢেউ। উপত্যকার মাঝে ছোট্ট একটি বৌদ্ধ স্তুপ। আর প্রকৃতির নিজের অজান্তেই বানানো কতো রুপ। উফ্ কি সৌন্দর্য্য। ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। শুধু মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে।







           ইয়ুমথাং ঘুরে হোটেলে ফিরে সবাই মিলে এক সাথে Lunch করলাম। লাচুং ছেড়ে আসতে মন চাইছিল নাতাও ফিরে আসতে হবে বাস্তবের জগতে। আবার কোনো দিন আসবো বলে মন খারাপ সাথে নিয়ে ফিরে চললাম গ্যাংটকের উদ্দ্যেশ্যে..........................!!


No comments

Powered by Blogger.